ভগবদ গীতা থেকে নেওয়া ৫ টি শ্লোক যা আপনার জীবনকে চিরতরে বদলে দেবে

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধের ময়দানে যখন অর্জুন নিজের আত্মীয় স্বজন , গুরু , ভ্রাতাদের দেখে হত্যা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তখন অর্জুনকে তিনি ভগবদ গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন। ভগবদ গীতার ৭০০ টি শ্লোকে কৃষ্ণ প্রেম, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি এবং জ্ঞানের বিশাল সমুদ্র আছে। ফলাফলের বিষয়ে চিন্তা না করে আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা যে একান্ত কর্তব্য সে শিক্ষা এই ভগবদ গীতা আমাদের দেয়।

ভগবদ গীতা থেকে নেওয়া ৫ টি শ্লোক যা আপনার জীবনকে চিরতরে বদলে দেবে। এই ৫ টি জীবন-পরিবর্তনকারী শ্লোক যা শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা ইত্যাদি সহ সকলের জন্য প্রয়োজনীয়

এটি পড়ুন এবং আপনি নিজেই পরিবর্তনটি দেখতে পাবেন।

ভগবদ গীতা কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যা কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লোকদের জন্য  । এটি পরম সত্তা (ভগবান কৃষ্ণ) এবং বিভ্রান্ত যোদ্ধা (অর্জুন) এর মধ্যে কথপতন।

ভগবদ গীতা আমাদের জীবনের জটিলতা এবং সেই জটিলতা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা শিখায় ।

কখনও কখনও আমি অবাক হই যে ৫০০০বছরের পুরানো একটি বই এখনও এ.আই. (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর যুগে একই ভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। আসলে মোদ্দা কথা হচ্ছে এই জ্ঞান অক্ষয়, এর জ্ঞান দেশ-কাল এর উপর নির্ভর করে না।

এটি একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জীবন যাপনের জন্য নির্দেশনা। এটিতে আপনার সমস্ত সন্দেহ, ভয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সমস্যা ইত্যাদির সমাধান রয়েছে, এটি নিয়মিত পড়ুন এবং আপনি আপনার জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করবেন।

ভগবদ গীতার প্রত্যেকটি শ্লোকই আমাদের জীবনের জন্য দিক নির্দেশনা ।

আমি এখানে আপনাদের কাছে ভগবদ গীতা থেকে ৫ টি শ্লোক উপস্থাপন করছি যা আপনার জীবনকে চিরতরে বদলে দেবে (কিন্তু আপনাকে অবশ্যই এই শিক্ষা পালন করতে হবে, তাহলে এই ইতিবাচক পরিবর্তন আপনার জীবনে দেখতে পারবেন)।

জীবন পরিবর্তনকারী ভগবদ গীতার ৫ টি শ্লোক

(১) আপনার কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান হোন ফলাফলের উপরে নয়:

এটি সম্ভবত ভগবদ গীতার  অন্যন্য শ্লোকগুলির মধ্যে একটি অন্যতম শ্লোক ।

এটা আমাদের শৈশব থেকেই শেখানো হয় (যদি আপনি ভারতী উপমহাদেশ থেকে আসেন) যে “কর্ম করো, ফলের চিন্তা করো না”। এর সহজ অর্থ হল আপনার স্বকর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হবে, ফলের চিন্তা করা যাবে না।

কোনটি গুরুত্বপূর্ণ - ফলাফল না কর্তব্য কর্ম?

স্পষ্টতই,  কর্ম, কারণ আপনি যদি ভাল ফলাফল চান তবে প্রথমে আপনার কর্মটি ভালোভাবে করতে হবে।

নিশ্চিত (কর্মের) উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন, অনিশ্চিত (ফলাফলের) এর উপর নয়। কারণ ফলাফলগুলি যদি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয় তাহলে আপনাকে কষ্ট পেতে হবে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেছেন যে নিজেকে কখনই ফলাফলের কারণ মনে করবেন না, কারণ ফলাফলগুলি শুধু মাত্র আপনার প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে না। এটি একাধিক কারণের উপর নির্ভর করে, উদাহরণস্বরূপ, পরিস্থিতি, আপনার কর্মের সাথে অন্যান্য জড়িত  ব্যক্তি ইত্যাদি ।

এছাড়াও, নিজেকে কর্ম করা থেকে সাথে বিরত রাখবেন না (নিষ্ক্রিয়তা) কারণ কখনও কখনও যখন কাজ কঠোর এবং বোঝা হয় তখন আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ি। সুতরাং আপনি যা করেন তার প্রতি আগ্রহ কখনও হারাবেন না।

 

(২)নির্ভীক হোন - আত্মা না জন্মে না কখনও মরে:

 

 

নির্ভীক হও আমার বন্ধু। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভয় হল "মৃত্যুর ভয়"। আমরা সকলেই জানি যে একদিন আমরা মরে যাব। তবে চিন্তা করবেন না।

আত্মা গৌরবময়, নির্ভীক, চিরনবীন(কখনও বৃদ্ধ হয় না) এবং অমর । মৃত্যু মানে শুধু  দেহের ধ্বংস, আত্মা না জন্মে না কখনও মরে।

এটি চিরদিনের জন্য বিদ্যমান এবং তা চিরকালই অব্যাহত থাকবে। মন থেকে মৃত্যুর ভয় দূরীভূত করুন কারণ মৃত্যু ভয় আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করবে , আপনি জীবনে যা করতে চান তা করতে পারবেন না ।
 

 

(৩)নরকের তিনটি প্রবেশদ্বার - কাম,ক্রোধ এবং লোভ :

 

কাম,ক্রোধ ও  লোভ এই তিনটি নরকের প্রবেশদ্বার। এগুলি মানব জীবনের কার্যত প্রতিটি একক সমস্যার মূল কারণ। (এখানে নরক স্ব-ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয়)

যদি কোনও ব্যক্তি কামুক, লোভী এবং ক্রুধদ থাকে, তবে এটি তাকে স্ব-ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

এটি  কাম দিয়ে শুরু হয়। আপনি যে কোনও উপায়ে আরও বেশি কিছু চাইলে কাম লোভের দিকে পরিচালিত করে।

অবশেষে, এক পর্যায়ে, আপনি যখন জিনিসটি আর পেতে সক্ষম না হন তখন আপনার কাম রাগে পরিণত হয়। এটি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করে যা নরকেরই সমতুল্য।

সুতরাং, কাম,ক্রোধ ও লোভ , প্রকৃতপক্ষে মন এবং আত্মার ভারসাম্যতাকে ব্যাহত করে। এই জিনিসগুলি আধ্যাত্মিক পথটিকে অবরুদ্ধ করে এবং তাই এই গুলোকে নরকের প্রবেশদ্বার বলা হয়ে থাকে।

(4) সহ্য করতে শিখুন - এই পৃথিবীতে কোন কিছুই স্থায়ী নয়ঃ

এটি ভগবদ গীতার অন্যতম শ্লোকগুলির মধ্যে একটি যে শ্লোকের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে এই  পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়।

শীত এবং গ্রীষ্মকাল প্রকৃতির সাময়িক  অবস্থা মাত্র। একইভাবে, আনন্দ এবং বেদনা অস্থায়ী(অনিত্য)। তারা (আগমা) আসবে এবং চলে যাবে (অনিত্য)।

কঠিন সময় আসবে এবং চলে যাবে। তাদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তাদের সহ্য করতে শিখুন। এই পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়।

একমাত্র জিনিস যা নিয়মিত পরিবর্তন হয় তা হল পরিবর্তন। তাই চিন্তা করবেন না!

(৫) সমুদ্রের মতো অবিচল হতে শিখুন:

এটি ভগবদ গীতার অন্যতম  একটি শ্লোক যা জীবনের স্থায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দেয়।

নদীগুলি সমুদ্রের সাথে ২৪ x ৭ একীভূত হয় থাকে, তবে নদী থেকে অবিচ্ছিন্ন জলের প্রবাহে বিরক্ত না হয়ে সাগর স্থির থাকে।

যদিও সমুদ্র সবসময় জলে পূর্ণ থাকে,বর্ষার সময় আরো জল নদীবাহিত হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করে কিন্তু সমুদ্রের কোন পরিবর্তন হয় না- স্থির থাকে; সমুদ্র কখনো বিক্ষুব্ধ হয় না। এমন কি বেলাভূমি অতিক্রম করে প্লাবিত হয় না। কৃষ্ণ ভাবনায় মগ্ন ব্যক্তিও  সর্বদা সর্বঅবস্থায় অবিচল থাকে। 

নদীর জল যেমন ঠিক তেমনি অন্তহীন চিন্তা আপনার মনে আসবে। এটি একেবারে স্বাভাবিক।এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।

খারাপ চিন্তাও মনকে নাড়া দেয়। তবে আপনি কেবল তখনই আপনার জীবনে শান্তি অর্জন করতে পারবেন যখন আপনি সমুদ্রের মতো স্থিতিশীল থাকবেন আপনার মনে আসা যে কোন চিন্তা নির্বিশেষে।

আপনার লক্ষ্য থেকে আপনাকে বিভ্রান্ত করে এমন ভাবনাগুলি প্রত্যাখ্যান করুন। প্রলোভন এবং আকাঙ্ক্ষাগুলি ত্যাগ করুন যা আপনাকে আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দেয়। সঠিক জিনিস নির্বাচন করতে শিখুন।

নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন এবং অন্য কোন উপায়ে নয়। আপনার মনকে আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেবেন না। আপনার নিজের বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।