বেশিরভাগ মুসলমান যা বলে থাকে:
“নিরপরাধ মানুষ হত্যা ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআন শরীফে কোথাও আল্লাহ কখনও হত্যার পক্ষে ছিলেন না। সমাজে অনেক খারাপ প্রকৃতির মানুষ আছে । যদি এই লোকগুলো কখন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেও তার জন্য সমগ্র ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের দোষারপ করা ঠিক হবে না। প্রকৃত ইসলাম কখন সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আমরা সমস্ত সহিংসতার নিন্দা করি। ইসলাম মানে শান্তি। ইসলাম মানে সহনশীলতা। ”
মুসলমানদের কি জ্ঞান রাখা উচিত:
বেশিরভাগ মুসলিমরা উপরে উল্লেখিত বিষয়টিই মনে করেন, তবে এটি কি সত্য? ইসলাম কি সত্যিই শান্তি, সহনশীলতা এবং অহিংসার প্রচার করে? যেসব মুসলমানরা এই অপরাধ করে তারা একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে। তারা বিশ্বাস করে যে তারা যা করে তা হল জিহাদ (পবিত্র যুদ্ধ)। তারা বলে যে কাফেরদের হত্যা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। তারা হত্যা করে না কারণ তারা ইসলামের আইন লঙ্ঘন করতে চায় তবে তারা মনে করে যে সত্য মুসলমানদের এটাই করা উচিত। যারা নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করার জন্য তাদের নিজের দেহকে উড়িয়ে দেয় তারা মনে করে যে তারা জান্নাতে পুরস্কৃত হবে। তারা আশা করে যে আল্লাহর অনুগ্রহ হবে, বেহেশতের খাবার খাবে, খাঁটি মদ পান করবে এবং বেহেশতের সুন্দরী হূর উপভোগ করবে। তারা কি পুরোপুরি বিভ্রান্ত? তারা এই বিকৃত ধারণাটি কোথায় পেল? তারা কীভাবে বিশ্বাস করে যে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা আল্লাহকে(সৃষ্টি কর্তা) সন্তুষ্ট করা যায়? নাকি তারা পথভ্রষ্ট? আসলেই কি ইসলাম হিংসার প্রচার করে? এটি কি বিশ্বাসীদেরকে অবিশ্বাসীদের হত্যা করার আহ্বান জানায়? যারা সহিংসতা করে এবং আমরা তাদেরকে চরমপন্থী বলে অভিহিত করি তাদের নিন্দা করি। তবে তারা কি সত্যই চরমপন্থী বা পবিত্র গ্রন্থ কুরআন তাদেরকে যা করতে বলে তা অনুসরণ করছে? কুরআন কি শিক্ষা দেয়? আমরা কি কোরআন পড়েছি?কি ধরণের শিক্ষা এগুলি আমরা কি জানি? আসুন আমরা দেখি আসলে কুরানে কয়েকটি আয়াতের মধ্য দিয়ে আমরা কি জানতে পারি এবং আল্লাহ কী বলেছেন তা আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি।
কোরআন আমাদের কী শিক্ষা দেয়:
আমরা এখানে বাংলা অনুবাদের জন্য বাংলাদেশ গভর্মেন্ট এর দ্বারা পরিচালিত কুরানের সাইট http://www.quran.gov.bd ব্যবহার করেছি। আপনারা খোলামনে কুরানের আয়াত গুলো দেখুন ও পর্যবেক্ষন করুন গভীরভাবে।কুরআন আমাদের কি বলেছে:
" ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব না করা" (৫:৫১)
"কাফেরদের(যারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী) যেখানেই পাও সেখানেই তাদের হত্যা কর" (২: ১৯১)
"তাদের হত্যা করো এবং তাদের সাথে কঠোর আচরণ করো" (৯: ১২৩) )
"পৌত্তলিকদের(যারা মূর্তি পূজা করে) সাথে লড়াই করে তাদের হত্যা করো, তাদের বন্দী করো, তাদের সাথে শত্রুতা করো, এবং প্রতিটি স্তরে তাদের জন্য অপেক্ষা কর" (৯: ৫)।
কুরআন দাবি করেছে যে আমরা কাফেরদের সাথে লড়াই করব, এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে "যদি তোমাদের মধ্যে বিশ জন থাকে তবে তোমরা দুশোকে পরাজিত করতে পারবেঃ যদি একশত হয় তবে তোমরা তাদের এক হাজারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে" (৮:৬৫)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল চান যে আমরা যেন খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সাথে লড়াই করি "যতক্ষণ না তারা স্ব-ইচ্ছায় নত হয়ে জিজিয়া [ইসলামী বিধি অনুসারে বসবাসরত অমুসলিমদের জন্য একটি জরিমানার কর] প্রদান করে" (৯:২৯) বলে।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ঘোষণা করেছেন যে পৌত্তলিকদের বা মুশরিকদের (যারা মূর্তি পূজা করে) সাথে আমাদের প্রতিশ্রুতি (চুক্তিগুলি) এবং বাধ্যবাধকতাগুলি ফিরিয়ে দেওয়া এবং যখনই আমরা নিজেদেরকে এতটা শক্তিশালী মনে করি তখনই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা গ্রহণযোগ্য (৯:৩)।
তোমরা "অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধ" করবে এবং "তিনি তাদেরকে আমাদের হাতে শাস্তি দেবেন,তাদের লাঞ্চিত কর, অমুসলিমদের বিরুদ্ধে তোমাদের বিজয় আল্লাহ নিশ্চিত করেছেন। " (৯:১৪)
যারা কাফের(আল্লাহর প্রতি যাদের বিশ্বাস নাই) , যারা আল্লাহর আয়াতকে বিশ্বাস করে না তারা অগ্নি প্রজ্বলিত জাহান্নামের অধিবাসী (৫:১০)।
তাদের পৌত্তলিকদের (নোংরা, অস্পৃশ্য, অপরিষ্কার) বলা হয়েছে (৯:২৮) ।
আল্লাহ তার অনুসারীদের কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছে , যতক্ষননা পর্যন্ত তারা অন্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে (২:১৯৩)।
এটিও বলে যে, "যারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী তারা জাহান্নামে যাবে এবং ফুটন্ত পানি পান করবে" (১৪:১৭)
এটি মুসলমানদেরকে "কাফেরদের হত্যার বা ক্রুশে বা কাটতে বলা হয়েছে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি" (৫:৩৪)।
এবং আমাদের বলে যে, “তাদের (অবিশ্বাসীদের) জন্য আগুনের পোশাক দেওয়া হবে এবং তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেওয়া হবে ।যার ফলে তাদের পেট ও ত্বকের যা কিছু রয়েছে তা বিগলিত হবে এবং তাদেরকে লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে” (২২) : ১৯-২২)
এবং তারা কেবল "এই জীবনে লাঞ্ছনা পাবে না, তবে কেয়ামতের দিন তিনি তাদের জ্বলন্ত আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে" (২২: ৯)।
কুরআনে বলা হয়েছে যে, "যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যকে ডাকে তাদেরকে কেবল দুনিয়াতেই শাস্তি দেওয়া হবেনা, বরং তাদেরকে বিচারের দিন শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং তারা সেখানে অপমানজনক অবস্থায় থাকবে" (২৫:৬৮)।
যারা "আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে বিশ্বাস করে না,আল্লাহ সেই সব কাফেরদের জন্য জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন! প্রস্তুত করে রেখেছেন" (৪৮:১৩)।
আল্লাহ যদিও আমাদের একে অপরের মধ্যে সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য বলেছেন , আমাদের খ্রিস্টান, ইহুদি এবং নাস্তিক প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের প্রতি কঠোর হতে হবে (৪৮:২৯)
"অবিশ্বাসীদের সাথে কঠোর" হতে হবে। যে ব্যক্তি ইসলামকে বিশ্বাস করে না, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর আদেশ দিয়ে বলেছেন: “তোমরা তাকে ধর এবং তাকে বেধে দাও এবং জ্বলন্ত আগুনে জ্বালিয়ে দাও। আরও, তাকে একটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ কর, যার দৈর্ঘ্য সত্তর হাত! সেই কাফের বা অবিশ্বাসী যে সর্বোচ্চ আল্লাহকে বিশ্বাস করেনি, যারা অভাবগ্রস্থ , ক্ষূধার্থ লোকদের খাবার দেয় নি! তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ,সেখানে তার কোনও বন্ধু থাকবে না। ক্ষঃত নিসৃত পুজ ব্যতিত আর কিছু পাবে না খাবার হিসেবে।” (৬৯:৩০-৩৭)
কুরআন মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছে এমনকি যদি সেই অবিশ্বাসী সেই মুসলমানের পিতা বা ভাই হয় (৯:২৩), (৩:২৮)।
আমাদের পবিত্র গ্রন্থটি আমাদেরকে কাফের এবং তাদের সরকারের প্রতি অবাধ্য হওয়ার এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টার সাথে লড়াই করার জন্য বলেছে (২৫:৫২)
এবং কাফেরদের সাথে কঠোর ব্যবহার কর ।কারণ তারা জাহান্নামের অধিবাসী (৬৬: ৯)।
আল্লাহ আমাদের জন্য যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে “এটি আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে ,হয়ত যুদ্ধ করতে আমাদের পছন্দ না ও হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তালা জানেন কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটি খারাপ।” (২: ২১৬)।
অতঃপর তিনি আমাদেরকে 'কাফেরদের মাথায় আঘাত করার নির্দেশ দিয়েছেন; এবং তদেরকে বেধে ফেলতে বলেছেন, যতক্ষন তারা অস্ত্র না নামায় , ততক্ষন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলা হয়েছে (৪৭:৪)।
আমাদেরকে আল্লাহ "অবিশ্বাসীদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করতে ,তাদের ঘাড়ে আঘাত করার এবং তাদের সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগে আঘাত করার আদেশ দিয়েছেন" (৮:১২)।
তিনি আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন যে যখন আমরা তাঁর নামে হত্যা করি, “প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই তাদের হত্যা করেন,আমরা যখন অবিশ্বাসীদের নিক্ষেপ করি প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই তাদের নিক্ষেপ করেন, আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে করান আসলে এটা বিশ্বাসী মুমিনদের উপর আল্লাহর পরিক্ষা মাত্র। আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিজেই করতে পারতেন” (৮:১৭)।
তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন "শত্রুদের অন্তরে ত্রাস ছড়াতে" (৮:৬০)।
তিনি জিহাদকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন এবং আমাদের সতর্ক করেছেন যে "আমরা যদি জিহাদের জন্য অভিযানে না যাই তিনি আমাদেরকে গুরুতর শাস্তি দেবেন এবং অন্যদেরকে আমাদের জায়গায় বসাবেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান ।" (৯:৩৯)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কথা বলেছেন এবং বলেছেন “হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে লড়াই কর এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হও। তাদের আবাস জাহান্নাম - এটি খুব নিকৃষ্ট স্থান”(৯:৭৩)।
তিনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমরা আল্লাহর জন্য লড়াই করে কাফেরদের হত্যা করব ও নিহত হব,আমাদের( মুমিনদের) জন্য জান্নাতের ব্যবস্থা আল্লাহ করে রেখেছেন। (৯:১১১)।
যারা বেহেশতে যাবে তাদের কে সেবা করার জন্য যারা আসবে তাদেরকে ছড়িয়ে থাকা মুক্তোর মত মনে হবে (৭৬:১৯) ।
পাশ্চাত্যে আমরা বিশ্বাসের স্বাধীনতা উপভোগ করি তবে আমাদের অন্য কাউকে এ জাতীয় স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয় না কারণ এটি লিখিত আছে: “যদি কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের (আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে) থাকে তবে তা কখনই তার কাছে গৃহীত হবে না; এবং আখেরাতে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে রয়েছেন (সমস্ত আধ্যাত্মিক মঙ্গল) (৩:৮৫)
এবং তিনি আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে যতক্ষণ না সম্পূর্ণ কোন্দল দূরীভূত না হয় এবং সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হয়, ততক্ষন সংগ্রাপ চালিয়ে যেতে (৮:৩৯)।
মহিলাদের ক্ষেত্রেও, আল্লাহর কিতাবটি বলে যে তারা পুরুষদের থেকে নিকৃষ্ট এবং তারা যদি স্বামীদের অবাধ্য হয় তবে তাদের মেরে ফেলার অধিকার রয়েছে (৪:৩৪)।
এটি "গাছের ডাল নিতে এবং নিজের স্ত্রীকে মারতে" পরামর্শ দেয় কারণ গাছের ডাল নমনীয় এবং এতে বেশি ব্যথা করে। (৩৮:৪৪)।
এটি শিখিয়েছে যে মহিলারা স্বামীদের অবাধ্য হলে তারা জাহান্নামে যাবে (৬৬:১০) ।
এটি বজায় রাখে যে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশি সুবিধা রয়েছে (২: ২২৮)।
এটি মহিলাদের উত্তরাধিকারের সমান অধিকারকে স্বীকার করে না (৪: ১১-১২),
এটি তাদেরকে দুর্বল বলে গণ্য করে এবং আদেশ দেয় যে তাদের সাক্ষ্য আইন আদালতে মান্য নয় (২:২৮২)।
আমাদের মহানবী (সা।) আমাদের চারটি স্ত্রী পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনি আমাদের বন্দী দাসীদের সাথে ঘুমানোর লাইসেন্স দিয়েছেন (৪: ৩)
এমনকি যদি সে মহিলাগুলি বিবাহিতও হয়। মুহাম্মদ(সাঃ)নিজেও তাই করেছিলেন। এ কারণেই যখন মুসলিম সেনারা অন্য অমুসলিম জাতিকে পরাধীন করে, তারা তাদেরকে কাফের বলে এবং তাদের মহিলাদেরকে ধর্ষণ করার অনুমতি দেয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা ১৯৭১ সালে ৩০,০০০০০ নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিককে গণহত্যা করার পরে পাকিস্তানি সৈন্যরা ২,৫০,০০০ বাঙালি নারীকে (যাদের বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মের অনুসারী) ধর্ষণ করেছিল , তৎকালীন সময়ে ইসলামিক ধর্মীয় নেতারা এই বলে সিদ্ধান্ত নিলেন যে বাংলাদেশীরা ইসলাম বিরোধী। এ কারণেই ইরানের ইসলামী শাসনামলে কারাগারের রক্ষীরা বন্দী অমুসলিম নারীদের হত্যা করার আগে তাদের ধর্ষণ করেছিল , কারণ তারা বিশ্বাস করেছিল যে এদের ধর্ষন করলে জাহান্নামে যাওয়া লাগবে না।
তথ্য সূত্রঃ http://www.quran.gov.bd/
Comments