জহর লাল নেহেরুর প্রকৃত বংশ পরিচয়

ধর্মের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের জন্ম হয়।পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান ,পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।বাংলাদেশ ও পাকিসস্তান মুসলিম প্রধান দেশ, তাই তাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। যাইহোক ইন্ডিয়া যদিও ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিতি লাভ করে কিন্তু সংবিধানে দেশের রাষ্ট্র ধর্ম হিন্দু ধর্ম না হয়ে , হয়ে গেল ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেকুলার । আর এই সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার পিছনে জওহর লাল নেহেরুর ভূমিকাই প্রধান। আজকে আমরা জওহর লাল নেহেরুর বংশ পরিচয় জানব।

প্রথমে দেখি নেহেরু এই নামের পদবী কোথা থেকে এল। জওহরলাল নেহেরু নিজেকে কাশ্মীরি পন্ডিত হিসেবে দাবি করতেন , কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাশ্মীরি পন্ডিতদের নেহেরু নামের পদবী দেখাই যায় না। নেহেরু পদবি ব্যবহার করে এমন কাশ্মীরি পন্ডিত জন্মু ও কাশ্মীরিতে খুজে পাওয়া যায় না। তাহলে জওহরলাল নেহেরু এই পদবি কোথায় পেল?

পার্সি 'নাহর' থেকে উদ্ভূত 'নেহরু' শব্দটি  , এর অর্থ বাংলাতে দাড়ায় একটি খাল বা নালা, মোতি লাল নেহেরু ছিলেন জওহরলাল নেহেরু পিতা, বিদেশী মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম নামের প্রতি তার খুব আকর্ষণ ছিল আর ওই নাম গুলোর বেশিরভাগই উৎপত্তি স্থল আরবি বা ফার্সি ভাষায়। মোতিলাল  'নেহরু' পদবী তার হিন্দু নামের সাথে ব্যবহার করে , হিন্দু নামে একটি ফার্সি স্বাদ যোগ করেন।

জওহর লাল নেহেরুর মায়ের নাম ছিল থুসু রহমান বাই, পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন স্বরুপ রানি ইনি ছিলেন মোতিলাল নেহেরুর দ্বীতিয় স্ত্রী। জওহরলাল নেহেরুর পিতামহের(মোতিলাল নেহেরুর পিতা)নাম ছিল গিয়াসউদ্দিন গাজী,পরবর্তিতে ১৮৫৭ সালে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন  গঙ্গাধর ।

জওহরলাল নেহরুর পিতামহ গিয়াসউদ্দিন ছিলেন একজন পার্সি তুর্কি সুন্নি মুসলিম যিনি মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের অধীনে দিল্লির মুঘল কোতওয়াল ছিলেন।  তিনি ভারতে ইউরোপীয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ বাহিনীর গ্রেফতার ও শাস্তি থেকে নিজেকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য তিনি গোপনে দিল্লি ত্যাগ করেন এবং তার ও পরিবারের জীবন ও সম্পত্তি বাঁচাতে নিজের মুসলিম নাম গিয়াসউদ্দিন পরিবর্তন করে গঙ্গাধর নামে একটি হিন্দু শব্দের নাম দিয়েছিলেন।

দিল্লি পুলিশের বর্তমান ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে: "১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ গুঁড়িয়ে দিয়ে কোটওয়ালের প্রতিষ্ঠানের পরি সমাপ্তি ঘটে এবং ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক আগে দিল্লির শেষ কোতওয়ালনিযুক্ত করা হয়।

দিল্লি পুলিশের ওয়েবসাইটে গিয়াসুদ্দিন গাজিকে দিল্লির শেষ মুঘল কোতওয়াল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এম কে আগরওয়াল সাম্প্রতিক ভারতীয় ইতিহাস, বৈদিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন। এম কে আগরওয়াল তার বই "ফ্রম ভারত টু ইন্ডিয়াঃদি রেপ অফ ক্রাইসি" বইয়ে ৪৫৯ - ৪৬০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে গঙ্গাধর নেহরুর আসল নাম ছিল গিয়াসউদ্দিন গাজী, যিনি তার এই নাম পরিবর্তন করে হিন্দু  নাম গঙ্গাধর  রাখেন যাতে ব্রিটিশরা তাকে ধরতে না পারে। মুঘল শাসন আমলে গিয়াসউদ্দিন গাজী মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর এর অধীনে  কোতওয়াল ছিলেন।

এম কে সিং তার সবচেয়ে প্রশংসিত এবং কর্তৃত্বমূলক বই "ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ" এ (১৮৫৭-১৯৪৭) জোরালোভাবে বলেন যে গিয়াসউদ্দিন গাজী দিল্লির শেষ কোতওয়াল ছিলেন এবং তিনি তার নাম পরিবর্তন করে গঙ্গাধর রাখেন।

গিয়াসউদ্দীন গাজীর নাতি জওহরলাল নেহেরু তার আত্মজীবনীতে বলেছেন যে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাচতে তিনি এবং তার পরিবার দিল্লি থেকে আগ্রা রওনা হয় তখন তার পিতামহের কর্মজীবনের সমস্ত রেকর্ড ধ্বংস করা হয়।

১৮৫৭ সালে যে সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল এর প্রধান মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর যদি , ইউরোপীয়ান ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কাছে বিজয় লাভ করতেন, গিয়াসউদ্দিন গাজী তার নাম পরিবর্তন করতেন না এবং ব্রিটিশ বাহিনীর শাস্তি থেকে বাঁচতে আগ্রায় পালিয়ে যেতেন না।

দুর্ভাগ্যবশত শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের অধীনে কোতওয়াল হিসেবে কর্মরত গিয়াসউদ্দিন গাজী , তার দিল্লির মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের  সাম্রাজ্য রক্ষা করার বদলে, গিয়াসউদ্দিন গাজী দিল্লি থেকে পলায়ন করেন তার নিজের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে ।

দিল্লি যখন ইউরোপীয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়, গিয়াসউদ্দিন গাজী তার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার সিদ্ধান্ত নেন এবং দিল্লি ছেড়ে আগ্রা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন , গিয়াসউদ্দিন গাজী, নিজেকে বন্দী হতে না দিয়ে এবং বিশেষত নিহত হওয়ার ভয়ে, তার স্ত্রী জিওরানি এবং তাদের চার সন্তানসহ আগ্রায় পালিয়ে যান। গিয়াসউদ্দিন গাজী ১৮৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। মতিলাল নেহেরু মরণোত্তর জন্মগ্রহণ করেন, তিন মাস পরে 6 মে, 1861 ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায়।